গজনী অবকাশ, শেরপুর: প্রকৃতির কোলে এক অন্যরকম ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

গজনী অবকাশ, শেরপুর: প্রকৃতির কোলে এক অন্যরকম ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

শহুরে জীবনের কোলাহল, কর্মব্যস্ততা আর ইট-পাথরের খাঁচা থেকে একটু মুক্তি খুঁজে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে হারিয়ে যেতে মন চায় অনেকেরই। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছে অনেক মনোরম স্থান। তেমনই একটি মন ভালো করে দেওয়া গন্তব্য হলো শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র। গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি তার প্রাকৃতিক শোভা, বৈচিত্র্যময় আকর্ষণ শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

অবস্থান পরিচিতি:

গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। ঠিক ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোল ঘেঁষে এর অবস্থান। উঁচু-নিচু টিলা, সবুজ বনানী আর স্বচ্ছ জলের হ্রদের সমন্বয়ে গঠিত এই স্থানটি পর্যটকদের অফুরন্ত আনন্দ আর প্রশান্তি এনে দেয়। শেরপুর জেলা প্রশাসন গারো পাহাড়ের এই মনোরম পরিবেশে একটি সুস্থ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে গজনী অবকাশ স্থাপন করেছে, যা সময়ের সাথে সাথে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য:

গজনীর মূল আকর্ষণই হলো এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানকার টিলাগুলো ছোট ছোট পাহাড়ের মতো, যা শাল-গজারীসহ নানা রকম গাছপালায় ঢাকা। টিলাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে সমতল ভূমি স্বচ্ছ জলের হ্রদ। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে কুয়াশার চাদর ভেদ করে যখন সূর্য উঁকি দেয়, তখন গজনীর দৃশ্য মন মুগ্ধ করে দেয়। সবুজ আর নীল জলের মিতালী, পাখির কিচিরমিচির শব্দসব মিলিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা লাভ করা যায় এখানে। বনের ভেতরের পায়ে হাঁটা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির খুব কাছে চলে আসা যায়। টিলার উপর থেকে চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।

গজনীর প্রধান আকর্ষণসমূহ:

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিনোদন উপভোগের ব্যবস্থা। প্রকৃতির কোলে হাঁটাচলার পাশাপাশি এখানে উপভোগ করার মতো বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান রাইড রয়েছে:

  • ক্রিস্টাল পাহাড় কুয়ার পাড়: গজনী অবকাশের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ক্রিস্টাল পাহাড়। পাথরের সিঁড়ি ভেঙে টিলার উপরে উঠলে আশেপাশের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। টিলার পাশেই রয়েছে 'কুয়ার পাড়' নামে পরিচিত আরেকটি স্থান, যেখানে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা এবং কিছু বসার স্থান।
  • ঝুলন্ত সেতু (সাসপেনশন ব্রিজ): দুটো টিলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে একটি আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু। এই সেতু দিয়ে পারাপার হওয়ার সময় নিচের লেক চারপাশের পরিবেশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। অনেকেই এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।
  • জলপ্রপাত (কৃত্রিম): টিলার গা বেয়ে নেমে আসা একটি কৃত্রিম জলপ্রপাত এখানকার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এর পাশে দাঁড়িয়ে শীতল জলের ছোঁয়া নিতে পারেন।
  • ওয়াচ টাওয়ার (সাইট ভিউ টাওয়ার): গজনীর সব থেকে উঁচু টিলার উপর নির্মিত হয়েছে একটি সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। এই টাওয়ারের উপর থেকে সম্পূর্ণ গজনী অবকাশ কেন্দ্র এবং এর আশেপাশের সবুজ বনভূমি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এক মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। দূরবীন দিয়ে আরও ভালোভাবে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগও রয়েছে।
  • পদ্ম সিঁড়ি: গজনীর লেকের ধারে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন পদ্ম সিঁড়ি। লেকের শান্ত জলের পাশে বসে বা সিঁড়িতে হেঁটে বেড়ানোর জন্য এটি চমৎকার একটি জায়গা।
  • লেকে নৌ-বিহার (প্যাডেল বোট কায়াকিং): গজনী অবকাশের লেকে প্যাডেল বোট এবং কায়াকিংদুটোরই ব্যবস্থা রয়েছে। লেকের শান্ত জলে বোটে করে বা কায়াকিং করে ঘুরে বেড়ানো এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। চারপাশে সবুজ টিলা আর বনানীর মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে নৌ বিহার করা অত্যন্ত উপভোগ্য।
  • শিশু পার্ক মিনি চিড়িয়াখানা (ভাস্কর্য): শিশুদের জন্য রয়েছে একটি আকর্ষণীয় শিশু পার্ক। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন পশুপাখির ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে, যা দেখতে অনেকটা মিনি চিড়িয়াখানার মতো লাগে। শিশুরা এই ভাস্কর্যগুলো দেখে আনন্দ পায় এবং এদের সম্পর্কে জানতে পারে।
  • আদিবাসী পল্লীর মডেল: গারো পাহাড় সংলগ্ন এই অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য এখানে একটি আদিবাসী পল্লীর মডেল তৈরি করা হয়েছে। তাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি জীবনযাপনের চিত্র এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
  • ক্যাবল কার জিপ লাইন (প্রস্তাবিত/পরিকল্পনায়): যদিও এখনও সম্পূর্ণভাবে চালু হয়নি, তবে গজনী অবকাশে ক্যাবল কার এবং জিপ লাইনের মতো আধুনিক রাইড যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা কেন্দ্রটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। (দর্শনার্থী যাওয়ার পূর্বে বর্তমান অবস্থা জেনে নিতে পারেন)
  • বিভিন্ন ভাস্কর্য প্রতিকৃতি: কেন্দ্রজুড়ে বিভিন্ন কাল্পনিক বাস্তব চরিত্রের নান্দনিক ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে, যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং ছবি তোলার সুন্দর স্পট তৈরি করে।

লেকের নির্মল শোভা:

গজনী অবকাশের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে এর হ্রদ বা লেকটি। টিলাগুলোর মাঝে শান্ত এই লেকের জল অত্যন্ত স্বচ্ছ। বোট রাইডের সময় লেকের দু'পাশের সবুজ টিলা গাছের প্রতিবিম্ব জলে পড়েছে, যা এক মায়াবী দৃশ্যের সৃষ্টি করে। লেকের ধারে হেঁটে বেড়ানো বা প্যাডেল বোটে করে ঘোরাঘুরি করা যেকোনো ভ্রমণকারীর জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

অ্যাডভেঞ্চার প্রকৃতি পাঠ:

যারা একটু অ্যাডভেঞ্চার ভালোবাসেন, তারা গজনীর বনের ভেতরে হাঁটাচলার সুযোগ নিতে পারেন। পায়ে চলা পথ ধরে টিলার উপরে ওঠা বা গহীন জঙ্গলের কিছুটা ভেতরে হেঁটে বেড়ানো শারীরিক মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। এটি একই সাথে একটি প্রকৃতি পাঠের সুযোগও তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, পাখি কীটপতঙ্গ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ মেলে এখানে।

ভ্রমণের সেরা সময়:

গজনী অবকাশ ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হলো শরৎকাল থেকে শীতকাল পর্যন্ত, অর্থাৎ অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এই সময় আবহাওয়া সাধারণত খুবই মনোরম থাকে, বৃষ্টিপাত কম হয় এবং চারপাশের প্রকৃতি সতেজ থাকে। বর্ষাকালে বা খুব বেশি গরমের সময়ে এখানে গেলে বৃষ্টির কারণে বা অত্যধিক গরমে ঘোরার অসুবিধা হতে পারে। ভরা বর্ষায় টিলার ভেতরের পথ পিচ্ছিল হতে পারে। শীতকালে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে, যা ঘোরার জন্য আরামদায়ক। তবে বছরের যেকোনো সময়েই গজনী অবকাশ ভ্রমণ করা যেতে পারে, তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে পরিকল্পনা করা ভালো।

গজনী অবকাশে সুযোগ সুবিধা:

পর্যটকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে:

  • খাবার দোকান রেস্টুরেন্ট: কেন্দ্রের ভেতরেই বাঙালি স্থানীয় আদিবাসী খাবারের বেশ কিছু দোকান ছোট রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানে নাস্তা, দুপুরের খাবার হালকা পানীয় পাওয়া যায়।
  • বিশ্রামাগার: ঘোরাঘুরির পর বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বেশ কিছু স্থানে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
  • ওয়াশরুম/টয়লেট: পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্ন টয়লেট ওয়াশরুমের ব্যবস্থা রয়েছে।
  • গাড়ি পার্কিং: গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য সুপ্রশস্ত জায়গা রয়েছে।
  • পরিবর্তন কক্ষ (ড্রেসিং রুম): লেকে গোসল বা অন্যান্য প্রয়োজনে পোশাক পরিবর্তনের জন্য কক্ষের ব্যবস্থা আছে।

কিভাবে যাবেন?

গজনী অবকাশ কেন্দ্র যেতে হলে প্রথমে আপনাকে শেরপুর জেলা শহরে আসতে হবে।

  • ঢাকা থেকে শেরপুর: ঢাকা থেকে শেরপুর যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস চালু আছে। মহাখালী, কল্যাণপুর বা অন্যান্য টার্মিনাল থেকে এসি/নন-এসি বাস পাওয়া যায়। ভাড়া সাধারণত ৪০০-৬০০ টাকার মধ্যে থাকে। বাসে সময় লাগে প্রায় - ঘন্টা।
  • শেরপুর শহর থেকে গজনী: শেরপুর জেলা শহর থেকে গজনী অবকাশ কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। শেরপুর শহর থেকে গজনী যাওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানীয় যানবাহন পাওয়া যায়, যেমনসিএনজি অটোরিকশা, টেম্পো, কিংবা রিজার্ভ গাড়ি/মাইক্রোবাস। সিএনজি বা টেম্পোতে যেতে ভাড়া জনপ্রতি ৫০-১০০ টাকা লাগতে পারে। রিজার্ভ নিলে সাধারণত ১০০০-২০০০ টাকা লাগতে পারে (ফেরত সহ) টেম্পো বা সিএনজি সাধারণত গজনী বাজারের কাছাকাছি পর্যন্ত যায়, সেখান থেকে হেঁটে বা রিকশায় অবকাশ কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে হয়।

প্রবেশ ফি বিভিন্ন রাইডের খরচ:

গজনী অবকাশ কেন্দ্রে প্রবেশের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রবেশ ফি ধার্য করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রাইড বা আকর্ষণ উপভোগ করার জন্য আলাদা টিকেট কাটতে হয়। এই ফিগুলো সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে, তাই যাওয়ার আগে সর্বশেষ তথ্য জেনে নেওয়া ভালো। নিচে একটি আনুমানিক ফি-এর তালিকা দেওয়া হলো:

গজনী অবকাশ প্রবেশ বিভিন্ন আকর্ষণ ফি (আনুমানিক):

আকর্ষণের নাম

ফি (টাকায়)

মন্তব্য

প্রবেশ ফি

২০-৫০

জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য

ওয়াচ টাওয়ার

২০-৩০

উপরে ওঠার জন্য

ঝুলন্ত সেতু

২০-৩০

পারাপারের জন্য

প্যাডেল বোট

১০০-২০০

প্রতি ঘণ্টা/ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য

কায়াকিং

১০০-২০০

প্রতি ঘণ্টা/ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য

শিশু পার্ক

৩০-৫০

প্রবেশ ফি/রাইড প্রতি

আদিবাসী পল্লী মডেল

-১০

দেখার জন্য

গাড়ি পার্কিং (কার/মাইক্রো)

৫০-১০০

পার্কিং ফি

গাড়ি পার্কিং (বাস/মিনি বাস)

১০০-২০০

পার্কিং ফি

দ্রষ্টব্য: উপরে উল্লিখিত ফিগুলো আনুমানিক এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যেকোনো সময় পরিবর্তিত হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য সরাসরি কেন্দ্রে খোঁজ নিতে পারেন।

ভ্রমণে কিছু টিপস:

গজনী অবকাশ ভ্রমণে যাওয়ার আগে ভ্রমণের সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক হতে পারে:

  • পোশাক: আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। টিলা বা পাহাড়ি পথে হাঁটার জন্য উপযুক্ত জুতো পরা আবশ্যক।
  • পানি হালকা খাবার: পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করার পানি সাথে রাখুন। ছোটখাটো স্ন্যাকস নিয়েও যেতে পারেন, যদিও ভেতরে খাবারের দোকান রয়েছে।
  • বৃষ্টির দিনের প্রস্তুতি: বর্ষাকালে গেলে ছাতা বা রেইনকোট সাথে রাখুন।
  • পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন: যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করুন।
  • ছবি তোলার সরঞ্জাম: সুন্দর দৃশ্যের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা বা ভালো ক্যামেরা যুক্ত মোবাইল ফোন সাথে নিন।
  • সূর্য থেকে সুরক্ষা: দিনের বেলা গেলে রোদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য টুপি, সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।
  • নগদ টাকা: কেন্দ্রের ভেতরে অনেক দোকানে অনলাইন পেমেন্টের ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে, তাই পর্যাপ্ত নগদ টাকা সাথে রাখুন।
  • দল বেঁধে ভ্রমণ: দল বেঁধে গেলে খরচ কম হতে পারে এবং ভ্রমণ আরও উপভোগ্য হয়।

উপসংহার:

শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র প্রকৃতির কোলে এক অসাধারণ ভ্রমণ গন্তব্য। এখানকার সবুজ টিলা, শান্ত হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, ওয়াচ টাওয়ারসবকিছু মিলিয়ে এক মন ভালো করে দেওয়া পরিবেশ। পরিবার, বন্ধু বা প্রিয়জনদের সাথে একদিনের ট্যুরের জন্য গজনী অবকাশ একটি চমৎকার স্থান। কর্মব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি দূর করে প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে হারিয়ে যেতে চাইলে গজনী অবকাশ হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য। তাই আর দেরি না করে পরিকল্পনা করে ফেলুন শেরপুরের গজনী অবকাশ ভ্রমণের। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

গজনী অবকাশ, শেরপুর সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQ):

প্রশ্ন : গজনী অবকাশ কোথায় অবস্থিত? উত্তর: গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার গজনী ইউনিয়নের গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।

প্রশ্ন : ঢাকা থেকে গজনী অবকাশের দূরত্ব কত? উত্তর: গজনী অবকাশ ঢাকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শেরপুর শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।

প্রশ্ন : গজনী অবকাশ ভ্রমণের সেরা সময় কোনটি? উত্তর: গজনী অবকাশ ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়টা সেরা, যখন আবহাওয়া ঠান্ডা মনোরম থাকে।

প্রশ্ন : গজনী অবকাশ কি প্রতিদিন খোলা থাকে? উত্তর: হ্যাঁ, গজনী অবকাশ কেন্দ্র সাধারণত প্রতিদিন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। তবে বিশেষ দিন বা সরকারি ছুটিতে সময়ের পরিবর্তন হতে পারে। সাধারণত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা/৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

প্রশ্ন : গজনী অবকাশে কি থাকার ব্যবস্থা আছে? উত্তর: গজনী অবকাশ কেন্দ্রের ভেতরে থাকার জন্য তেমন উন্নত ব্যবস্থা নেই। তবে শেরপুর জেলা শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল গেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখান থেকে সকালে এসে সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার শহরে ফিরে যাওয়া যায়।

প্রশ্ন : গজনী অবকাশে কি ধরনের খাবার পাওয়া যায়? উত্তর: গজনী অবকাশের ভেতরে ছোট ছোট দোকানে স্থানীয় বাঙালি খাবার, নাস্তা, চা-কফি, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি পাওয়া যায়।

প্রশ্ন : গজনী অবকাশে কি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে? উত্তর: হ্যাঁ, গজনী অবকাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান রয়েছে। এজন্য নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হয়।

প্রশ্ন : গজনী অবকাশে কি প্রবেশ ফি লাগে? কত? উত্তর: হ্যাঁ, গজনী অবকাশে প্রবেশের জন্য জনপ্রতি একটি নির্দিষ্ট প্রবেশ ফি লাগে। এর পরিমাণ সাধারণত ২০- ৫০ টাকা হয়ে থাকে, যা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এছাড়াও ভেতরের বিভিন্ন আকর্ষণ বা রাইডের জন্য আলাদা ফি লাগে।

প্রশ্ন : গজনী অবকাশ কি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নাকি শিশুদের জন্যও আকর্ষণীয়? উত্তর: গজনী অবকাশ সকল বয়সের মানুষের জন্য আকর্ষণীয়। এখানে যেমন প্রকৃতির শান্ত পরিবেশ রয়েছে, তেমনই শিশুদের জন্য পার্ক পশুপাখির ভাস্কর্যের মতো বিনোদনের ব্যবস্থাও আছে।

প্রশ্ন ১০: গজনী অবকাশে কি পাহাড়ে ট্রেকিং করার ব্যবস্থা আছে? উত্তর: গজনী অবকাশে বড় ধরনের ট্রেকিংয়ের ব্যবস্থা নেই, তবে টিলার উপর হেঁটে ওঠার জন্য সিঁড়ি বা পায়ে হাঁটা পথ রয়েছে যা এক ধরনের হালকা ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা দিতে পারে।

  

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Ads

Ads